প্রকাশিত:
গতকাল

যে এমআরটি লাইনটি ডিসেম্বর ২০২২ থেকে দুই ধাপে চালু হয়, সেটি এখনো দুই বছর ছয় মাসও পূর্ণ করেনি। অথচ ২০-৩০ বছরের নকশাগত আয়ুষ্কালের একটি বিয়ারিং প্যাডের এমন বিপর্যয় বার্ধক্যের কারণে নয়, বরং গভীরতর ও মৌলিক ত্রুটির ইঙ্গিত বহন করে।
বিয়ারিং প্যাড হলো যে কোনো রেল বা সড়ক অবকাঠামোর (Viaduct) অত্যাবশ্যক অংশ। ইলাস্টোমেরিক রাবার-স্টিল কম্পোজিট উপাদানে তৈরি এই প্যাডগুলো কংক্রিট ডেক (যার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে) ও পিয়ারের মাঝখানে বসানো থাকে। এর মূল কাজ হলো ট্রেনের ওজন সমানভাবে বণ্টন করা, কম্পন শোষণ করা এবং তাপমাত্রা বা চলাচলের কারণে সৃষ্ট ক্ষুদ্র গতিবিধি সামলানো। যখন এই প্যাড ব্যর্থ হয়, কঠিন হয়ে যাওয়া, সরে যাওয়া, স্থানচ্যুতি বা পুরোপুরি ‘ফল ডাউন’ হলে, তখন লোড বণ্টনে ভারসাম্য নষ্ট হয়, ডেকে (Deck) অমিল সৃষ্টি হয় এবং পিয়ার (Pier) কাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী ঘটনাটিতে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে যায়, যা ইঙ্গিত করে যে এটি আর পিয়ার ও ডেকের মধ্যে সংযোগ অবস্থায় ছিল না। যেহেতু মেট্রো লাইনটি ডিসেম্বর ২০২২-এ উদ্বোধন করা হয়েছিল, তাই এই পর্যায়ে অকাল ক্ষয় বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবজনিত অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং সম্ভাব্য কারণগুলো হলো-
পুনরাবৃত্তি রোধে করনীয় : ১. স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা নিরীক্ষা : প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন, দক্ষ ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম সংস্থার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি। এটি কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত হওয়া উচিত নয়। ২. তাৎক্ষণিক কাঠামোগত ব্যবস্থা : সব গুরুত্বপূর্ণ ভায়াডাক্ট অংশে অতিরিক্ত পার্শ্ব-নিয়ন্ত্রণ যেমন শিয়ার কি বা গাইড বার সংযোজন করে স্থানচ্যুতি রোধ করতে হবে। ৩. প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট গঠন : ডিএমটিসিএল-এর অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী, প্রকৌশলী নেতৃত্বাধীন রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট গঠন করতে হবে, যারা প্রতি ছয় মাসে দৃশ্যমান পরিদর্শন ও প্রতিবছর লোড টেস্ট পরিচালনা করবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নিতে পারবে। ৪. ডিএমটিসিএল-এর কাঠামোগত সংস্কার : এই বহু বিলিয়ন টাকার অবকাঠামো পরিচালনাকারী সংস্থাটিকে জ্ঞানভিত্তিক ও সেবাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে, যা প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ পেশাদারদের দ্বারা পরিচালিত হবে। বর্তমানে প্রেষিত বা অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ আমলাদের প্রাধান্য নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের জন্য বড় ঝুঁকি।
যদি মূল কারণ শনাক্ত না হয় এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই ধারাবাহিক দুর্ঘটনাগুলো শুধু মেট্রো ব্যবহারকারীদের নয়, বরং প্রতিদিন নিচের সড়কে চলাচলকারী হাজারো নাগরিকের মধ্যেও ভয়ের সঞ্চার করেছে।