প্রকাশিত:
গতকাল

বুধবার (২৯ অক্টোবর) নয়াদিল্লি থেকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই ঘোষণা দেন।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনের পর গঠিত এমন কোনও সরকারের অধীনে আমি বাংলাদেশে ফিরব না, যেখানে আওয়ামী লীগকে বাদ দেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, আপাতত তিনি ভারতে থাকার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের পর তিনি আশ্রয় নেন।
হাসিনার পতনের পর থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রয়টার্সকে পাঠানো ইমেল বার্তায় হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের উপর নিষেধাজ্ঞা কেবল অন্যায্যই নয়, এটি আত্মঘাতীও। পরবর্তী সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে যদি লক্ষ লক্ষ সমর্থক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন।”
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লক্ষ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে। বহু দশক ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হিসেবে রয়েছে। বিএনপি এবার নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মে মাসে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তের কথা উল্লেখ করে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না। আমরা এখনও আশা করি সাধারণ জ্ঞান ও ন্যায়বিচারের জয় হবে, এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।”
তিনি কোনো নেপথ্য আলোচনা চলছে কি না তা স্পষ্ট করেননি। অন্যদিকে, ইউনূস সরকারের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
হাসিনা, যিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃতিত্বপ্রাপ্ত হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত, ২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেই নির্বাচন বিরোধী দলগুলোর বয়কট ও কঠোর দমন-পীড়নের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি ছাত্র বিক্ষোভে সহিংস দমন অভিযানের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছিল—যা ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত।
১৩ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। হাসিনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এই মামলাগুলো রাজনৈতিক নাটক। এগুলো ক্যাঙ্গারু আদালতে চলছে, যেখানে রায় আগেই নির্ধারিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই দোষী বানানো হয়েছে।”
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে আওয়ামী লীগ আবারও বাংলাদেশের ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে—সরকারে হোক বা বিরোধী দলে।
“বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো এক ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে নয়,” হাসিনা বলেন। “আমরা যে ভবিষ্যৎ চাই তা অর্জনের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে হবে।”
নির্বাসনে থেকেও তিনি সতর্ক জীবনযাপন করছেন বলে জানান। কয়েক মাস আগে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লোধি গার্ডেনে তাকে হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চাই, তবে তখনই যখন সরকার বৈধ হবে, সংবিধান সমুন্নত থাকবে এবং আইন-শৃঙ্খলা সত্যিকারের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হবে।”
তার বিদায়ের পর আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলেও পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। তবে এই মাসের শুরুতে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সনদ স্বাক্ষরের সময় নতুন করে সংঘর্ষ ছড়ায়।