বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে এক অনানুষ্ঠানিক সালিশে এই অমানবিক রায় দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গেল সেপ্টেম্বর মাসে শাহজাহানের মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হলেও আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়নি। মঙ্গলবার অনুষ্ঠান আয়োজন করলে স্বল্প সময়ের জন্য মাইক ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজন এসে জবাবদিহি চাইতে গেলে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। পরে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সালিশ বসান।

মেয়ের বাবা শাহজাহান জানান, গরিব পরিবার হওয়ায় সীমিত আয়োজনেই অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। পরিবারের আনন্দে সামান্য মাইক বাজানোর অপরাধে আফসার, ছারোয়ার ও মালেক তাদের সবাইকে মারধর করেন। এরপর আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ সালিশদাররা পরিবারের সব সদস্যকে ১৫টি করে বেত মারার সিদ্ধান্ত দেন। বারবার ক্ষমা চাইলেও কোনো লাভ হয়নি। বেত্রাঘাতের পর আরও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জরিমানা দিতে না পারায় আফসার তার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে।

সালিশে উপস্থিত আলা উদ্দিন মাঝি জানান, মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া হট্টগোলে আফসারের ৫০ হাজার টাকা হারানোর অভিযোগ ওঠে, যদিও তার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি বলেন, সালিশদারদের একজন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দেন।

তার দাবি, নারীদের বেত মারা হয়নি; শুধু পুরুষদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর নারীদের শাসনের দায়িত্ব ‘ঘরের মুরুব্বি’ হিসেবে শাহজাহানকেই দেওয়া হয়েছে—তিনি বেত মারবেন।

স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের গ্রাম্য সালিশ সম্পূর্ণ বেআইনি। বাংলাদেশের আইনে ফৌজদারি অপরাধের বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা শুধু আদালতের। কোনো সালিশে শারীরিক শাস্তি দেওয়া ব্যক্তিস্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি ফৌজদারি অপরাধ। মাইক বাজানোর মতো সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারকে এভাবে নির্যাতন ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করা অগ্রহণযোগ্য—তারা দ্রুত আইনি ব্যবস্থার দাবি জানান।

সাগরিয়া ফাঁড়ির এসআই ফরহাদ হোসেন জানান, বিয়েতে মাইক বাজানো নিয়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পরামর্শ দেন। তার ভাষ্য—সালিশ বসার সময় তিনি স্থান ত্যাগ করেন এবং পরে আর কোনো তথ্য তাকে জানানো হয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।