প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবর, ২০২৫

গতকাল বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের রাজধানী ডেস মইনেসে অনুষ্ঠিত বোরলগ ডায়ালগ সম্মেলনে এই পুরস্কার তুলে দেন ডব্লিউএফপিএফ এর সভাপতি মাশাল হুসেইন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গভর্ণর টমাস জে. ভিলসাক।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়নে কয়েক দশকের অবদান ও উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্টের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ডব্লিউএফপিএফ যৌথভাবে এ পুরস্কার ঘোষণা করে। এবারে ডব্লিউএফপিএফ বিশ্বের ২৭ দেশের ৩৯ জনকে টপ অ্যাগ্রি ফুড পাইওনিয়ার হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পুরস্কার গ্রহন করেছেন লাল তীর সিডস লিমিটেড ও লাল তীর লাইভস্টক লিমিটেডর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল মিন্টু। প্রতিষ্ঠান দুটি মাল্টিমোড গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে।
বিশ্বব্যাপী খাদ্যের গুণমান, পরিমাণ এবং প্রাপ্যতা উন্নত করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী কৃতিত্ব, খাদ্য ব্যবস্থার রুপান্তর, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার ক্ষেত্রে আবদুল আউয়াল মিন্টুর অসামান্য অবদানকে তুলে ধরা হয় পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে এ উদ্ভাবন বিজ্ঞান, নেতৃত্ব এবং উত্সর্গের প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে জানানো হয়।
গতকালের অনুষ্ঠানে ডব্লিউএফপিএফ সভাপতি মাশাল হুসেইন বলেন, ২০২৫ সালে টিএ এফপি তালিকাটি এমন সব অসাধারণ ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্য, প্রতিভা এবং অঙ্গীকারকে তুলে ধরেছে, যারা সীমান্ত ও শাখা-পেশার সীমানা অতিক্রম করে একটি টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন। বিশ্ব যেখানে নানান সংকটের মুখোমুখি, সেখানে এই সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্ভীক পরিবর্তন সাধন করেছেন। তারা সবচেয়ে কার্যকরভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবদান রেখেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রকৃতপক্ষে আশা জাগাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে আবদুল আউয়াল মিন্টুর অবদান ও উদ্ভাবনের বিষয় তুলে ধরে বলা হয়, নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশ নিম্নমানের বীজ উত্পাদন এবং ফসলের কম উত্পাদনশীলতার সাথে লড়াই করছিল। তখন মানসম্পন্ন বীজের চাহিদা মেটাতে যাত্রা শুরু করে লাল তীর সিড লিমিটেড। এটি দেশের প্রথম গবেষণা ভিত্তিক বীজ কোম্পানি হিসেবে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে। এটি দেশের বৃহত্তম বীজ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান যা দেশের মোট বীজের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করছে।
খাদ্য, পুষ্টি এবং আয়ের বৈচিত্র্যকে উত্সাহিত করতে বাংলাদেশে হাইব্রিড সবজির উন্নয়ন ও প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মিন্টু ও তার প্রতিষ্ঠান। ধানের পাশাপাশি বাংলাদেশে সবজি আবাদ চালু করতে তিনি নেতৃত্ব দেন। যার ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের ফলন এবং আয় বেড়েছে। লাল তীর এখন ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উচ্চমানের বীজ রপ্তানি করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ লাল তীর বীজের ব্যবহারে সংযুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পরিবর্তনে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা শুরু হয় কৃষকদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। আমাদের লক্ষ্য হলো কৃষকদের দারিদ্র্যের চক্র ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জ্ঞান সরবরাহ করা। পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য স্থিতিস্থাপকতায় অবদান রাখা। ভবিষ্যতে আবহাওয়া ও জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন করার মাধ্যমে কৃষকের উত্পাদন বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে চাই। কৃষক ও মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে চাই।