এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনী। কপিরাইট © ২০২৫
সাপ্তাহিক ইনকিলাব কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনী। কপিরাইট © ২০২৫
সাপ্তাহিক ইনকিলাব কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
প্রকাশিত:
গতকাল
কৃষি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নোটিশের কপি ও কার্যাদেশ পর্যালোচনা সহ একাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সার হিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানির জন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে মন্ত্রণালয়। এবার সেটা করা হয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাই একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। যেখানে টেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উল্টো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া জন্য আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম।
পরবর্তীতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য আমদানিকারকেরা রাজি হলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারা মন্ত্রনালয়ে সম্মতিপত্র চায় মন্ত্রনালয়। আমদানিকারকদের নিকট থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করার ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে এবং সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র (ধারা ৮-গ) অনুযায়ী প্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ প্রদান করার বিধান থাকলেও মন্ত্রণালয়ের বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে দরপত্রের প্রাপ্ত দরের বাইরে গিয়ে মনগড়া ভাবে নেগাশিয়েশনের মাধ্যমে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সার আমদানির কার্যাদেশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম ও যুগ্ম সচিব মোঃ খোরশেদ আলম। শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনগড়া ভারে একাধিক দরে সার সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং কপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং নামে দ্’ুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার মেট্্িরক টন সার দুই ধরণের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) আমদানির অনুমতি দিয়েছে। অথচ এই কোম্পানী মন্ত্রণালয়কে এই দরে কোন প্রাইজ অফার করেনি। বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং মন্ত্রণালয়কে যে প্রাইজ দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশী দরে তাদের কে আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করে চলছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ পুরোপুরো স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে একটিমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকেই সার আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়। অপর প্রতিষ্ঠানসমূহ যারা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকে সম্মান জানিয়েছিল তাদেরকে সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং আরো সার আমদানির জন্য ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ পুণরায় আরেকটি দরপত্র আহবান করেছে। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এই কাজ করেছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এই নজিরবিহীন কাজে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতার দরের বাইরে গিয়ে নেগোসিশশেনর মাধ্যমে বিধি লংঘন করে দুর্নীতি করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের এজেন্ডা বাস্তবায়না দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে বাজারে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে।
অনিময়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে আমদানির অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক। যদি এমনটি হয়ে থাকে, একই স্টিমেট দিয়ে রাতের আঁধারে একটি কোম্পানিকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনা ঘটে তবে সেটা তদন্ত করা উচিত। প্রয়োজনে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা উচিত। পরিবর্তন দরকার। আগের সিস্টেমে যদি অনিয়ম হয় তা দু:খজনক। সবকিছুতে জবাবদিহি থাকা উচিত। লটারিং সিস্টেম থাকা সত্বেও তা না মানার বিষয়টিও আমাদের ভাবায় যে সেখানে কি পরিমান আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর ও বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সার আমদানির অনিয়মের সাথে জড়িত জড়িত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, সাবেক আইন প্রতিমমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একান্ত সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব
আহমেদ ফয়সাল ইমাম, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একনিষ্ঠ সহযোগী ও ভৈরবের সাবেক উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বতর্মানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের
যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলম এবং সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একান্ত সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপসচিব মনিরুজ্জামান।