প্রকাশিত:
১১ আগস্ট, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
সাত্তার ৯ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনার পর ওইদিন এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আব্দুস সাত্তারের ওই বক্তব্যের দায় সম্পূর্ণ তার এবং এর সঙ্গে তার দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু আব্দুস সাত্তার এখনো তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। সে কারণে সরকার বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে কি-না কিংবা অভিযোগকারী নিজেই সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তথ্য প্রমাণ জমা দেবেন কি-না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যুগ্ম সচিব থাকার সময়ে তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছিলো। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকার তাকে ভূতপূর্ব সচিব পদে পদোন্নতি দেয়। এরপর তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে ঢাকায় অফিসার্স ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নির্বাচন ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ১০৬ জন কর্মকর্তার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়, যার মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্যসচিবসহ ৭০ জন সচিব ছিলেন। এরপর মে মাসে তখনকার পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনসহ ছয়জনের সদস্যপদ স্থগিত করে তার নেতৃত্বাধীন কমিটি। সাত্তার একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।
শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি সচিব সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া আর মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। আরও বক্তব্য দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা।
এই অনুষ্ঠানেই এ বি এম আব্দুস সাত্তার আলোচক হিসেবে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে দেওয়া তার বক্তব্যে বলেন, তিনি খুবই হতাশ। ‘আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আট উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না,’ কারও নাম প্রকাশ না করেই বলেছেন সাত্তার।
এ সময় ওই সভায় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা ‘ঠিক ঠিক’ বলে হাততালি দেন বলে ঢাকার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর এসেছে।
তাকে উদ্ধৃত করে প্রকাশ হওয়া খবরে দেখা যায় সাত্তার তার বক্তব্যে আরও বলেছেন, ‘কষ্ট লাগে একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি মন্ত্রণালয় নূরজাহান বেগম চালাতে পারেন? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় একজন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা দিয়ে চালানো ঠিক হচ্ছে?’
শনিবার সংবাদপত্রে এসব বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর এটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা হতে দেখা যায়।
এর পরপরই সরকারের দিক থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিএনপির দিক থেকে দলটির মহাসচিবের বিবৃতি আসে গণমাধ্যমে।
ওদিকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পরে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সেমিনার একটি একাডেমিক বিষয়। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞজনেরা দেশের জনপ্রশাসনের গতিপ্রকৃতি ও প্রত্যাশা নিয়ে তাদের নিজস্ব বক্তব্য দেন। অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’।
শনিবারই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয় এ বি এম আব্দুস সাত্তার অজানা (নাম উল্লেখ না করা) উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। আমরা দৃঢ়তার সাথে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি। প্রমাণ উপস্থাপন বা ব্যক্তিদের শনাক্ত না করে ঢালাও অভিযোগ করা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জন আস্থার জন্য ক্ষতিকর, বিবৃতিতে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব দাবি করেন তাদের প্রশাসন স্বচ্ছতা, সততা এবং জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, যদি আবদুস সাত্তারের কাছে কোনো অসদাচরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকে, আমরা তাকে অবিলম্বে তা যথাযথ আইনগত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানাই"।
এখন কী হবে?
‘যেহেতু পাবলিকলি একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ তুলেছেন, সেহেতু এটা শুধু কথাবলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত হবে না।
অভিযোগকারীর উচিত সুনির্দিষ্ট তথ্য কি আছে সেটা সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানা উচিত। মানুষেরও জানার অধিকার আছে, বলছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে দুর্নীতির বিষয়ে কিছু তথ্য সংবাদ মাধ্যমে আসলে এতোটা সুনির্দিষ্টভাবে এমন অভিযোগ আর আসেনি। সে কারণেই বিষয়টি শেষ না করে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দেবপ্রিয় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও বলছেন, অভিযোগকারী সরকারকে এ বিষয়ে তার কাছে থাকা তথ্যাদি দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করা উচিত।